মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

পটভিূমি ও বিকাশ

ডাঃ কার্ল রেইনবোর্গ
 
সারা বিশ্বে গৃহভিত্তিক ব্যবসা দ্রুততর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের সকলে বর্তমানে এ ব্যবসার গুরুত্ব অনুধাবন করত শুরু করেছে। অনেক বছর পূর্বে  J.Paul Gatty যথার্থই বলোছন “ প্রকৃত সফল জীবনে জীবনে প্রয়োজন নিজের ব্যবসা থাকা”। অধিকাংশ লোকজন মনে করেন নতুন ব্যবসা মানে নিরাপদ স্থান দরকার, এক  সাথে প্রচুর পরিমান ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাকে মোকাবেলা করতে হবে। একমাত্র  নিজের নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায় আপনাকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে। সমীক্ষায় প্রাপ্ত ১% লোক ধনি তন্মধ্যে ৭৪% নিজের ব্যবসায় থেকে। আমেরিকায় প্রতি ১০ সেকেন্ডে একটি গৃহভিত্তিক ব্যবসা খোলা হচ্ছে এবং ২০,০০,০০০ লোক ১ লক্ষ ডলার আয় করছে (Money Magazine-March 1996)।

গৃহভিত্তিক ব্যবসা গঠনের একমাত্র সহজ ও উৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং। পন্য থেকে নেট ব্যবসায়ে সূচনা। আমরা সকলে পন্য ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। নেটওয়ার্ক ব্যবসা ৫০ বছরের পুরাতন শিল্প। প্রখ্যাত লেখক ও নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী Jhon Kalench বলেছেন, “ নেটওয়ার্ক্ ব্যবসা হলো বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম সুযোগ”। এটি হলো ভবিষ্যতের ঢেউ। সর্বশেষ ক্রেতা সাধারনের মাঝে পন্য ও সেবা পৌছানো নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র। মূলত এটি হচ্ছে বিতারন ও বিপণনের আধুনিক পদ্ধতি। এটি হচ্ছে ঝুঁকিবিহীন ও ন্যূনতম পূজিঁ বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশাল সম্ভাবনা এবং প্রতিনিধিত্বের সমন্বয়। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে এটি  E-Commerce সুবিধা দিচ্ছে। ই-নেটওয়ার্ক ব্যবসাকে এটি নিশ্চিত বিজয়ের দিকে ধাবিত করেছে। বহু সফল ব্যবসায়িক কোম্পানি বর্তমানে তাদের পন্য ও সেবা বিপনণে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। যেমন- কোকাকোলা, জিলেট, কোলগেট, পামেলিভ, এমসআই, স্প্রিন্ট, AT & T, Rexall, Primerica, IBM & GM.
১৯৪০-৪১ সালে ডাঃ কার্ল রেইনবোর্গ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি আবিস্কার করেন। যুক্তরাস্ট্রে ১৯৪৩ সালে Nutrilite Food Supplement Corporation প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে নেটওয়ার্ক পদ্ধতির সূচনা করে। কয়েক বছরের মধ্যে এটি সরাসরি বিপনণ হতে MLM, Network & E-Network  বিপনণে পরিবর্তিত হয়। এদের মূল ধারনা হলো এক ও অভিন্ন, যা হলো পন্য ও সেবা  বিতরণ এবং বিপনন। NFSC এর দুইজন  কর্মকর্তা রীচ ডি ভস এবং জে. ভেন এন্দেল এম এল এম কোম্পানিকে আরো উন্নত করার মাধ্যমে ১৯৫৮ সালে এ্যামওয়ে কর্পোরেশন গঠন করেন। ১৯৫৮ সালে মার্কিন সিনেটে এম এল এম এর ওপর ভোটাভুটি হয় । ১০ ভোট বেশি পেয়ে এম এল এম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে সারা বিশ্বে এম এল এম কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ১৮০০০ এবং ব্যবসাকারী ১২৬ টির ও বেশি। সবচেয়ে বেশি এম এল এম কোম্পানি কাজ করছে মালায়েশিয়ায় যার বর্তমান সংখ্যা প্রায় ৮৫০ টি। ১৯৭৩ সাল থেকে সেখানে এম এল এম এর কার্যক্রম শুরু হয় এবং এর ওপর সরকারি নীতিমালা প্রণীত হয় ১৯৯৩ সালে যা এ্যাক্ট-৫০০ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ডঃ রফিকুল আমিন
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত পেট্রোনাস টাওয়ার এম এল এম কোম্পানির নিজেস্ব সম্পত্তি। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি সপ্তাহে এমএলএম এর নতুন ক্রেতা-পরিবেশক হয় ৩০ লক্ষের অধিক। ২০০৩ সালে এমএলএম এর ডিস্ট্রিবিউটর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। এমএলএম এর মাধ্যমে আমেরিকার প্রসাধনী ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের প্রায় ৩৫% সম্পাদিত হয়। বহুল প্রচলিত পে-অর্ডার সিস্টেম হচ্ছে বাইনারী ম্যাট্রিক্স ও ম্যাট্রিক্স সিস্টেম। বাইনারী ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি চালু হয় ১৯৯০ সালে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানী গুলোর নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যক্রম মনিটরের জন্য পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের নাম DSA (Direct Selling Association). ম্যানেজমেন্টের ছাত্রদের জন্য দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে এম এর এম এর ওপর বাধ্যতামূলক কোর্স চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমএলএম এর ওপর কোর্স চালু করার চিন্তা ভাবনা করছে।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম GGN নামে একটি  কোম্পানি  এমএলএম কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু সেটি বেশিদিন তাদের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে পারেনি। পরবর্তীতে আধুনিক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর জনক স্যার ডঃ মোঃ রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেইন ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সফলভাবে এমএলএম ব্যবসার প্রয়োগ করে। অবশেষে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে এমএমএল ওপর আইন পাশ করতে বাধ্য হয যা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রন এ্র্যাক্ট-২০১৩ নামে পরিচিত।